নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির কারণে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে সব শ্রেণি পেশার মানুষ। গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন ধরনের সবজি ঘুরপাক খাচ্ছে তারপরও নতুন উদ্যোমে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের সবজি, মাছ, মাংস, মশলাসহ অন্য ভোগ্যপণ্যের দাম।
সীমিত আয়ের মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যসামগ্রী চাহিদামতো কিনতে না পেরে অসহায়ত্ব বোধ করছেন। নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয়ভাবে বৃদ্ধিতে হতবাক ক্রেতারা। খেটে খাওয়া মানুষেরা কোন কোন পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। কিছু দিন আগেও যে সব পণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল তা এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।
মনোহরদী উপজেলার বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র মনোহরদী পৌরসভা বাজার, হাতিরদিয়া বাজার এবং চালাকচর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যে, চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচা তরিতরকারির (সবজির) দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে অসহনীয় পর্যায়ে।
চালের মধ্যে- নাজিরশাইল, মিনিকেট, পাইজাম, ঊনত্রিশ, আটাইশ এবং দেশি মোটা চাল ও আতপ চালসহ অন্য চাল প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। খোলা আটা ৬৫ টাকা, প্যাকেট জাত আটা ৭০ টাকা, মুড়ি ৮০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। সবজির বাজারে রীতিমতো আগুন। সবজি এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে যেমন,পটল ১০০ টাকা চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কচুর লতি ৮০ টাকা, ঢেড়স ৮০ টাকা, ভরবটি ১০০ টাকা, সিম ১৪০ টাকা, ভেন্ডি ৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, শশা ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, আলু ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁচাকলা ৩০-৪০ টাকা হালি, লালশাক ও পুঁইশাক ৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকা, মূলা ১০০, কচু ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৯০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, লেবু ৮০ টাকা হালি।
মাছ প্রতি কেজি রুই ৪০০ টাকা, গুলশা ৮০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শিং ৬০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ ৩০০ টাকা, সিলভার কাপ ৩০০ টাকা চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা, ইলিশ ১২০০-১৮০০ টাকা, শোলমাছ ৬০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, কৈ মাছ ৩০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, বাইন মাছ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন ১৯০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, লবণ ৪০ টাকা, মসুর ডাল ১৪০ টাকা, খেসারী ১০০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা এবং দুধ ৭০ টাকা লিটার করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বাজার করতে আসা ক্রেতারা অভিযোগ তুলেছে যে আমাদের আয় না বাড়লেও প্রতিদিনই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। দিন দিন তা আরও লাগামহীন অবস্থা।
মনোহরদী উপজেলার চালাকচর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী খোকন মিয়া বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাল খাবার-দাবার পরিবেশন করা যেন এখন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বর্তমানে এক হাজার টাকা দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বাজার করা যায় না। এর মধ্যে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ তো আছেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন তদারকি নেই তাই এ বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে মনোহরদী উপজেলা ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ মিয়া বলেন, আমাদের দৈনন্দিন অভিযান চলছে সর্তক করা হচ্ছে, অনিয়ম পেলেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
মনোহরদী উপজেলা কৃষি অফিসার রুনা আক্তার বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম একটু বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু এটা সাময়িক। আবহাওয়া ও বৈশ্বিক সমস্যার এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির নাজুক হওয়ার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আশা করছি দ্রুতই সবজির দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
মনোহরদী ইউএনও হাছিবা খান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। সবজি এবং অন্য দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে প্রতিটি দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা টানানোর জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে।
টিএইচ